ঝুঁকিতে পড়বে অর্থনীতি
১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৭ এএম
দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের চাপে এমনিতেই মানুষ পিষ্ট। এখন হঠাৎ করে ভ্যাট-কর বাড়ানো সাধারণ মানুষের জন্য যেন ‘বোঝার উপর শাকের আঁটি’। ভ্যাট বাড়ানোর কারণে আবার নতুন করে অনেক জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা হবে আরো দুর্বিষহ। এক বছরের বেশি সময় ধরেই দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন ঘটেছে; কখনো খাদ্যে, কখনো খাদ্য বহির্ভূত খাতে, কখনো আবার সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে দুই অঙ্কের ঘর। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়েও ওষুধ, এলপি গ্যাস, মোবাইল ফোনের সিমকার্ডের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যসহ শতাধিক পণ্য ও সেবায় আমদানি, উৎপাদন, সরবরাহ পর্যায়ে শুল্ক ও কর বাড়ল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকার শুল্ক-কর বাড়ানোর সহজ পথ বেছে নিয়েছে। শুধু ভ্যাট বাড়ানোই নয়; একই সাথে সরকার টিসিবির ট্রাক সেলও বন্ধ করে দিয়েছে। আর এই পদক্ষেপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে খাত-সংশ্লিষ্টরা। আর রাজনীতিবিদরা অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ‘গণবিরোধী’ বলে মন্তব্য করেছেন।
গত ৯ জানুয়ারি রাতে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এবং ‘দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নামে এ দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। তার আগে ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক বাড়াতে এনবিআরের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। অধ্যাদেশ জারির পরপরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে; এতে তা সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয়ে গেছে। হঠাৎ করে শতাধিক পণ্যের ভ্যাট-কর বাড়ানোর সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সর্বমহলে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, আচার, টমেটো কেচাপ বা সস, জুস, টিস্যুপেপার, ফলমূল, সাবান-ডিটারজেন্ট পাউডার, মিষ্টি, চপ্পলের ওপর ভ্যাট হার বৃদ্ধি মানুষকে আরো চাপে ফেলবে। সবাই বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক দুটি সিদ্ধান্ত, শুল্ক-কর বৃদ্ধি ও টিসিবির ট্রাক সেল কর্মসূচি বন্ধ, স্পষ্টভাবে রাষ্ট্রীয় নীতির অদূরদর্শিতা এবং অসামঞ্জস্যের প্রতিফলন। প্রথমত, শতাধিক পণ্যের ওপর শুল্ক-কর বৃদ্ধি করা হয়েছে এটি জনসাধারণের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি একটি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। মূল্যস্ফীতির উচ্চ মাত্রা বর্তমানে সাধারণ মানুষের ওপর ব্যাপক আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেছে এবং এভাবে শুল্ক-কর বাড়ানো আরো বেশি চাপ তৈরি করবে। এর ফলে বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, যা দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।
গত জুলাই-আগস্ট যে গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে তাতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বাইরে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। আর তার কারণ ছিল নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। হাসিনা সরকারের সময় নিত্যপণ্যের বাজার ছিল নিয়ন্ত্রণহীন। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রিত হতো। তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী সেটি স্বীকার করে সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেনÑ এই সিন্ডিকেট খুবই শক্তিশালী। তাদের বিরুদ্ধে আমি কিছুই করতে পারব না। দেশের সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ হয়ে, ক্ষুব্ধ হয়ে রাজপথে আন্দোলনে নেমে আসে। দেশের মানুষের আশা ছিল শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে দ্রব্যমূল্য কমবে। তাদের জীবনযাত্রায় স্বস্তি ফিরে আসবে কিন্তু তাদের সে আশা দিনে দিনে দুরাশায় পর্যবসিত হচ্ছে। বাজার এখনো সেই সিন্ডিকেটের কবলে রয়েছে। শুধুমাত্র তাদের রঙ পরিবর্তন হয়েছে। আগে আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট ছিলÑ এখন তার স্থলে অন্য দলের নামে সে সিন্ডিকেট চলছে। এই সিন্ডিকেটের সাথে নতুন নতুন আরো অনেকের জড়িত থাকার অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। চাঁদাবাজিও চলছে দেদার। আগের চেয়ে চাঁদাবাজির ধরন পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। মানুষের মনে প্রশ্নÑ অন্তর্বর্তী সরকার এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না কেন? আগে সিন্ডিকেটের সাথে সরকারের মন্ত্রী-এমপি এমনকী আমলারাও জড়িত ছিল। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি সরকার। তাহলে কি এখনো সবার যোগসাজশে সিন্ডিকেটের কার্যক্রম অব্যাহত আছে? যদি সরকারের কারো স্বার্থ জড়িত না থাকে তাহলে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না কেনÑ এ প্রশ্ন সবার মনে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সমালোচনা করে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। তারা এখনো বাজার সিন্ডিকেট দমন করতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা মানুষ। প্রতিদিনের সংসারের ব্যয় মেটাতে জনগণকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। তাতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ আরেক দফা বাড়ছে সাধারণ মানুষের। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। সেখানে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, আচার, টমেটো কেচাপ বা সস, জুস, টিস্যুপেপার, ফলমূল, সাবান-ডিটারজেন্ট পাউডার, মিষ্টি, চপ্পলের ওপর ভ্যাট হার বৃদ্ধি মধ্যম ও নি¤œ আয়ের মানুষকে আরো চাপে ফেলবে। আপনারা জানেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। এখনো লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতীমূলক। এ ধরনের কর এমন এক সময়ে বাড়ানো হলো যখন দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে শুধু নি¤œ আয় ও প্রান্তিক আয়ের মানুষ নয়; মধ্যবিত্তরাও হিমশিম খাচ্ছেন। বাজেটের আগেই এসব পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমবে। নতুন করে সঙ্কটে পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য। জনজীবনের নিত্যদুর্ভোগ কিংবা বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি শুধু সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করেন, তাহলে জনগণের কাছে সংস্কার আগে না সংসার প্রশ্নটিই মুখ্য হয়ে উঠতে পারে। দুর্ভোগ মেনে নিলেও জনগণ এখনো সরকারের বিরুদ্ধে তেমন উচ্চবাচ্য করছে না। কারণ, জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরা নিজেদেরকে সফল দেখতে চায় কি-না, মানুষের ক্ষুধা নিবৃতির কার্যক্রমের মাধ্যমে সেটি তাদেরকেই প্রমাণ করতে হবে। এদিকে ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, মোবাইলে ফোনের সিম ব্যবহারের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবাসহ শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক, কর, ভ্যাট বাড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা দুটি অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। একই সঙ্গে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রক্রিয়া ফের শুরু করার কথাও বলছে দলটি। গতকাল রাজধানীর বাংলা মটরে কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, সরকার সাধারণ মানুষের ওপর পরোক্ষ কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেমনÑ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য বিস্কুট, সাধারণ হোটেল, মোবাইল রিচার্জ, গ্যাসসহ অপরিহার্য পণ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলবে। তারা বলেন, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং আইএমএফের চাপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রান্তিক, স্থায়ী উপার্জনকারী এবং নি¤œ-মধ্যম আয়ের মানুষের উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা দেশের অর্থনীতিতেও সঙ্কট তৈরি করবে। এসব সিদ্ধান্ত প্রকারান্তরে স্বৈরাচারী সরকারের মতো জনগণের পকেট কাটার নীতি।
জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। গত নভেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এখনো রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৪২ হাজার কোটি টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, এই রাজস্ব ঘাটতি মেটাতেই নতুন করে ভ্যাট আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। এ ছাড়া সম্প্রতি ঋণের শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করার শর্ত দিয়েছে। বাংলাদেশকে দেয়া ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারে চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ঘুরে গেছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। তখন চলমান ঋণ কর্মসূচির আকার আরো ৭৫ কোটি ডলার বাড়ানোর অনুরোধ করে বাংলাদেশ। এই অর্থ দিতেও সম্মত হয়েছে আইএমএফ। এ জন্য কর আদায় ও নীতি গ্রহণকারী সংস্থাকে আলাদা করাসহ রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর মতো কিছু কঠোর শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। সেই শর্ত পূরণেই ভ্যাট বাড়ানোর এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, সরকারের অর্থ দরকার। তাই বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের ওপর খরচের চাপ কিছুটা বাড়বে। এমনকি অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এমনিতে মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের অর্থনীতি। এ অবস্থায় ভ্যাট হার বাড়ানো হলে নিশ্চিতভাবেই মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। এটি অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনবে না। এই সিদ্ধান্তের ফলে অর্থনীতিতে ঝুঁঁকি তৈরির সম্ভাবনাই বেশি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমান সরকার কর আয় বাড়ানোর জন্য পরোক্ষ করের ওপর অতিমাত্রার নির্ভরতা আরো বাড়াচ্ছে এটি সত্যিই আশ্চর্যজনক এবং উদ্বেগজনক। পরোক্ষ কর সাধারণত সাধারণ জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। কারণ, এসব কর সরাসরি পণ্যের মূল্য বা সেবার সাথে যুক্ত থাকে এবং জনগণ এগুলোর পুরো বোঝা বহন করে। বিশেষ করে যখন মূল্যস্ফীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, তখন এ ধরনের কর বৃদ্ধির ফলে গরিব ও মধ্যবিত্ত জনগণের জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে উঠবে। অথচ সরকার যদি তাদের রাজস্ব নীতির পুনর্বিবেচনা করে এবং ধনীদের কাছ থেকে আরো কর আদায় করার পথে পদক্ষেপ নেয়, তবে তা বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে। যদি সরকার তাদের কর ব্যবস্থাপনায় আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতো এবং কর ফাঁকি দেয়া ধনীদের থেকে প্রকৃত কর আদায় করত, তবে সরকারের রাজস্ব আয় আরো শক্তিশালী হতে পারত। বিশেষ করে, যারা অবৈধভাবে কর ফাঁকি দেয়, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব। সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো সাধারণ মানুষের ঘাড়ে করে বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। সরকার যদি পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে, প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে ধনীদের কাছ থেকে কর আদায় বৃদ্ধি করতে পারত, তবে তা দেশের অর্থনীতিকে আরো ভারসাম্যপূর্ণ এবং স্থিতিশীল করে তুলতে পারত। জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানো এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমতার ভিত্তিতে কাজ করা সরকারের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য বয়ে আনতে পারে। কিন্তু যদি সরকার শুধু পরোক্ষ করের ওপর অতিরিক্ত চাপ দেয়, তাহলে তা কেবল সাধারণ মানুষের জন্যই নয়, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে।
ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, যে ধরনের পণ্যে ভ্যাট বসানো হয়েছে, সেগুলো একেবারেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য না হলেও এগুলো প্রায় সব সাধারণ মানুষ ব্যবহার করেন। যেমনÑ কাপড়চোপড়, সাবান, ডিটারজেন্ট, আচার, রেস্তোরাঁয় যাওয়া, মোবাইলফোন ব্যবহার, সিমকার্ড এগুলো সাধারণ মানুষ সবাই ব্যবহার করে। তিনি বলেন, ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে এসব পণ্যমূল্য বাড়বেই। এটির একটি চাপ সব মানুষের ওপর আসবে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ভ্যাট বাড়লেও জিনিসপত্রের দামে প্রভাব পড়বে না। কারণ, অত্যাবশ্যকীয় সব পণ্যের শুল্ক কমিয়ে জিরো (শূন্য) করে দেয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতির মূল ইন্ডিকেটরগুলো হলো চাল, ডাল এগুলো। আর আমরা যেসব জিনিসের ওপর কর বাড়াচ্ছি, এগুলো মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই মুহূর্তে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। ব্যবসায়ী মহলের অনেকেই বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজস্ব আয় বাড়ার পরিবর্তে উল্টো কমতে পারে। তারা বলছেন, এমনিতেই মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। সেখানে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, আচার, টম্যাটো কেচাপ বা সস, জুস, টিস্যুপেপার, ফলমূল, সাবান-ডিটারজেন্ট পাউডার, মিষ্টি, চপ্পলের ওপর ভ্যাট হার বৃদ্ধি মানুষকে আরো চাপে ফেলবে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যবসা-বাণিজ্য খাত বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। এখনো লোকসান কাটিয়ে ওঠা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার
উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস